Skip to main content
 

বিচার বিভাগ, নরসিংদী

তাঁত শিল্পের মেলা, নরসিংদী জেলা’ ব্র‌্যান্ডিং খ্যাত তাঁত শিল্পের ঐতিহ্যমন্ডিত নরসিংদী জেলা মুঘল আমলে মহেশ্বরদী পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিলো। মহেশ্বরদী পরগনা মুঘল আমলে ঢাকা জেলার অন্তর্গত নারায়ণগঞ্জ মহকুমার অধীন একটি পরগনা ছিলো। সুলতানি আমলে এর নাম ছিলো সুবর্ণবীথি। এই পরগনার অংশবিশেষের সমন্বয়ে বর্তমান নরিসংদী জেলা গঠিত হয়। নরসিংদী শব্দটির আসল রূপ হলো নরসিংহদী। ঈশা খাঁর একাদশ ঊর্ধ্বতন পুরুষ রাজা নরসিংহ পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে শীতলক্ষ্যা নদীর তিন মাইল পূর্বে প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে নগর নরসিংহপুর’ নামে একটি ছোট শহর প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে পলাশ থানায় অবস্থিত এবং পারুলিয়া নামে পরিচিত। নগর নরসিংহপুর’ ছিল ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিম তীরে। এই নদীর পূর্ব তীরে নরসিংহের চর’ নামে একটি গ্রাম এখনও বর্তমান। ধারণা করা হয় রাজা নরসিংহের নাম থেকেই নরসিংহদী নামের উৎপত্তি হয়। নরসিংহের সঙ্গে দি’ শব্দটি কীভাবে যুক্ত হয়েছে তার একটি ব্যাখ্যা আছে। আসলে প্রাচীনকালে শব্দটি ছিলো ডিহি’। সংস্কৃত ভাষার এই শব্দটির অর্থ হলো ডাঙ্গা’। নরসিংদী একটি উচ্চ স্থলভূমি হওয়ায় প্রাথমিক যুগে এর নামকরণ হয় নরসিংহ ডিহি। পরবর্তীতে জনসাধারণের মুখে বিকৃত হয়ে এর নামকরণ হয় নরসিংহ দীহি। এই শব্দটি উচ্চারণে হ ও হি অক্ষর দুটির আলাদা কোনো গুরুত্ব না থাকায় তা ক্রমান্বয়ে বাদ পড়ে নরসিংদী হয়।

১৮৮২ সালে স্থাপিত নারায়ণগঞ্জ মহকুমার অধীনস্থ রূপগঞ্জ থানাধীন ছিলো বর্তমান নরসিংদী সদর থানার সমগ্র এলাকা। নরসিংদীর অবশিষ্ট এলাকা তখন রায়পুরা ও মনোহরদী থানার অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ১৯১০ সালে নরসিংদীতে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপিত হয় যা ১৯৩৩ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ থানায় রূপন্তরিত হয়। সম্ভবত একই সময়ে শিবপুরেও একটি পূর্ণাঙ্গ থানা স্থাপিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কালীগঞ্জ ও শিবপুর থানার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে পলাশ থানা গঠিত হয়। তারপর, ১৯৭৭ সালে নরসিংদী, রায়পুরা, মনোহরদী, শিবপুর ও পলাশ এই পাঁচটি থানা নিয়ে নরসিংদী মহকুমা গঠিত হয়। এই নবগঠিত নরসিংদী মহকুমায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেও মুন্সেফ আদালতের কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকেই পরিচালিত হয়। ১৯৮২ সালে নারায়ণগঞ্জ হতে নরসিংদী মহকুমায় মুন্সেফ আদালত স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালের ৩১ আগস্ট ভাড়া করা বাসায় মুন্সেফ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। নরসিংদী মহকুমার ১ম মুন্সেফ ছিলেন জনাব হারুন ওসমানী।

১৯৮৩ সালে রায়পুরা, মনোহরদী ও শিবপুর থানার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে বেলাব থানা গঠিত হয়। পরবর্তীতে, ১৯৮৪ সালে নরিসংদী, রায়পুরা, মনোহরদী, শিবপুর, বেলাব ও পলাশ এই ছয়টি থানার সমন্বয়ে নরসিংদী জেলা গঠিত হয়। তবে, বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতার কারণে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় ঢাকা থেকেই পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালের ১৫ জানুয়ারী নরসিংদী জেলা ও দায়রা আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। জনাব মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন নরসিংদী জেলার ১ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে নরসিংদী জেলার ১৮ তম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে জনাব মোসতাক আহমেদ দায়িত্ব পালন করছেন। নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অধীনে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ছাড়াও ৩টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ২টি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ২টি সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও ৪টি সহকারী জজ আদালত রয়েছে। এছাড়াও, অসহায় বিচারপ্রার্থীদের আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা ও দায়রা জজ, নরসিংদী এর অধীনে সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিচারক জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

          নরসিংদী জেলায় ২০০৭ সালের ১১ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। জনাব মিয়া মো: শরীফ হোসেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ১ম বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ৯ম বিচারক হিসেবে জনাব মেহেরুন্নেসা দায়িত্ব পালন করছেন।

          মাসদার হোসেন মামলার রায়ের নির্দেশনা মোতাবেক ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মাধ্যমে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর নরসিংদী জেলার ১ম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব মোহাম্মদ আতাউর রহমান। বর্তমানে নরসিংদী জেলার ৮ম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জনাব মোল্যা সাইফুল আলম দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীনে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ছাড়াও ১টি অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ৩টি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ৪টি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে। এছাড়াও, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীনে দ্রুত বিচার আদালত, বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত ও পরিবেশ আদালত এর কার্যক্রম চালু রয়েছে।

          নরসিংদী জেলার জনসাধারণের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকারকে সমুন্নত রাখতে নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালত, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আন্তরিতার সাথে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।